বিপ্লব সাহা খুলনা ব্যুরো চীফ :

খুলনায় বিএনপি’র দল গঠন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
সূত্রটি জানিয়েছে দীর্ঘদিন ধরে যেসব নেতাকর্মীরা মাঠ পর্যায়ে থেকে আন্দোলনের সংগ্রাম করেও যদি পদ না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে এর থেকে বড় দুঃখর আর কিছু থাকে না।
এক্ষেত্রে ক্রমান্বয়ে দিন দিন দলের ভিতরে অসন্তোষ বাড়ছে নগর বিএনপিতে। তবে এখনই এসব বিষয়ে মুখ খুলতে চাইছে না পদ
বঞ্চিতরা ।
এক্ষেত্রে দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে খুলনা মহানগর আহবায়ক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার পর ওয়ার্ড পর্যায়ে দল পূর্ণ গঠন করেছে বিএনপি। এসব কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন দীর্ঘদিনের আন্দোলন সংগ্রামে ত্যাগী নেতাকর্মীরা আবার নগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ও মতপার্থক্য দৃশ্যমান।
স্বাক্ষর ক্ষমতা থাকলেও ওয়ার্ড পর্যায়ে আহবায়ক কমিটি ঘোষণা বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর নেই নগর বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক তরিকুল ইসলাম জহিরের।
ফলে দল পুনর্গঠনে প্রক্রিয়ায় মন ভাঙছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের অসন্তোষ বাড়ছে নগর বিএনপিতে।দলীয় সূত্র থেকে আরও জানা গেছে নগরীর ১৮ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র যুগ্ন আহবায়ক মোহাম্মদ ইব্রাহিম হাওলাদার ও সদস্য মোঃ গফফার বিশ্বাস পত্রিকায় ঘোষণা দিয়ে রাজনৈতিক পদ থেকে নাম প্রত্যাহার করেছেন। পদত্যাগের কারণ হিসেবে ইব্রাহিম হাওলাদার বলছে ১৮ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র ৫ নং যুগ্ন আহবায়ক করায় আমার মান সম্মান ক্ষুন্ন করা হয়েছে।
এদিকে ২১ নং ওয়ার্ড বিএনপির আহবায়ক মোল্লা ফরিদ আহমেদ পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তিনি বর্তমান ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন সেখান থেকে ফিরে আনুষ্ঠানিকভাবে দল থেকে পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন।
আবার ভিন্ন চিত্র অন্যদিকে নগরীর ২৯ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাবেক সভাপতি আজম খান কমার্স কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস মেজবাহ উদ্দিন মিজুকে রাখা হয়নি কোন কমিটিতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এমন কিছু নেতাকর্মীরা বলেছেন শুধু মেজবাহ উদ্দিন নন।
এক সময় ওয়ার্ড পর্যায়ে বিএনপি’কে যারা সুসংগঠিত করে রেখেছেন এবং বলিষ্ঠভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের মধ্য সিংহভাগ নেতাদের মহানগরের নতুন ওয়ার্ড কমিটি গুলোতে ঠাঁই হয়নি।
গত ৯ মার্চ রাতে মহানগরের ২০ টি ওয়ার্ড ও একটি ইউনিয়নে এসব কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর আগে গত বছর এক মাস মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি ঘোষণা হয়। সেখানেও মহানগর ও থানা বিএনপির সাবেক নেতাদের বাদ দেওয়া হয়। এবার বাদ পড়লেন ওয়ার্ড কমিটির ত্যাগী নেতারা।
এদিকে নতুন কমিটিতে যারা পদ পেয়েছেন তাদের মধ্যেও অসন্তোষ রয়েছে। নগর বিএনপির একাধিক নেতার অভিযোগ ওয়ার্ড কমিটি করতে গঠিত সংগঠনিক কমিটি যে সুপারিশ জমা দিয়েছিল অনেক ওয়ার্ডে তা মানা হয়নি।
এদিকে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন নিজের লোকদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি করেছেন।
এসকল অভিযোগের ক্ষেত্রে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে মূলত সব কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন প্রায় তিন দশক ধরে মহানগর বিএনপির দায়িত্বে থাকা সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু অনুসারীরা। ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর তাকে শফিকুল আলম মনাকে সরিয়ে আহবায়ক ও শফিকুল আলম তুহিনকে সদস্য সচিব করে মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়। বাদ পড়ার পর সংবাদ সম্মেলন করায় এই বছরের ২৫ ডিসেম্বর মঞ্জুকে দল থেকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্র।
এদিকে সদ্য ঘোষিত ওয়ার্ড কমিটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে মঞ্জুকে কোণঠাসা করতে মহানগর ও ওয়ার্ড কমিটিতে আস্থাভাজনদের আনার চেষ্টা করছেন বর্তমান নেতারা। সাবেক ও ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে কমিটি করতে গিয়ে কয়েকটি ওয়ার্ড নেতা খুঁজতে পড়তে হয়েছে বিড়ম্বনায়।
কমিটি পূর্ণ করতে হয়েছে মহিলা দল ও যুবদল নেতাদের দিয়ে। অনেক ওয়ার্ডেই থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের পদধারী যুবদলের নেতাদেরকে সদস্য করা হয়েছে ওয়ার্ড বিএনপিতে।
দলীয় সূত্র থেকে আরও জানা গেছে ১৭ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাবেক সভাপতি এস এম শাহজাহানের রাজনীতি শুরু জিয়াউর রহমানের হাত ধরে।
অথচ তিনিও নতুন ওয়ার্ড কমিটিতে নেই। এদিকে ১৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি সাদিকুর রহমান সবুজ শেখ জামিরুল ইসলাম ও নেই কমিটিতে। অথচ প্রতিটি কর্মসূচিতে তাদের সামনের সারিতে দেখা যায়।
ওয়ার্ড কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আন্দোলন সংগ্রামের চেয়ে মহানগর সদস্য সচিবের নিজস্ব লোককেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পদ বঞ্চিতদের। ২০ নং ওয়ার্ডের নতুন আহবায়ক আসাদুজ্জামান আসাদ ছিলেন সোনাডাঙ্গা থানা যুবদলের সভাপতি প্রার্থী তাকে ওয়ার্ড বিএনপিতে পদ দেয়ার যুবদল নেতারা ও হতাশ। ওই ওয়ার্ড কমিটির পূর্ণাঙ্গ করতে গিয়ে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়েছে। দেখা গেছে আসাদের চেয়ে দ্বিগুন বয়সের প্রবীণ নেতাদের রাখা হয়েছে তার নিচের পদে। সদস্য করা হয়েছে থানা ও ওয়ার্ড যুবদলের বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা নেতাদের।
দলের সোনাডাঙ্গা থানা সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মুরাদ জানান রাজপথে যারা রক্ত ঝরিয়ে খুলনা বিএনপিকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তারা এখন বিএনপি’র কোন পদে নেই।
তিনি আরো বলেন ত্যাগী নেতাদের দায়িত্ব এখন প্রতিদিন আদালতে মামলা হাজিরা দেওয়া আর চোখের পানি ফেলা। ওয়ার্ড কমিটি করতে মহানগর বিএনপি’র পক্ষ থেকে ১১ টি সাংগঠনিক টিম করা হয়েছিল। নগরীর ২২, ২৩ ও ২৭ নং ওয়ার্ড সাংগঠনিক টিমের প্রধান ছিলেন নগর-বিএনপি’র যুগ্ন আহবায়ক চৌধুরী হাসানুর রশিদ মিরাজ। তিনি জানান আমরা যে তালিকা জমা দিয়েছিলাম তাঁতে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিএনপিতে এখন পকেটের মধ্যেও পকেট।
নগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন জানান চলমান আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছেন মামলায় আসামি হয়েছেন তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে কমিটি করা হয়েছে।
প্রাথমিক সদস্য ফরম বিতরণের সময় যারা আসেননি দল ত্যাগ করেছেন যারা আমাদের মানেন না তাদের কমিটিতে নিয়ে কি করব। নিজের লোকজনদের কমিটিতে রাখা প্রসঙ্গে তিনি জানান সংগঠনিক কমিটি যে প্রস্তাব দিয়েছে যারা তাদের নিয়েই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়েছে।