সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জে দীর্ঘ ১৩ বছরের ব্যবধানে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেলেন শিক্ষক আবুল আ’লা মোঃ মওদুদ। রবিবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়েল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোঃ জসিম উদ্দিন, জনাকীর্ণ আদালতে প্রদত্ত রায়ে তাঁকে বেকসুর খালাস প্রদানের রায় ঘোষণা করেন। সুনামগঞ্জ সরকারি এসসি বালিকা বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত এই প্রধান শিক্ষক বর্তমানে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
জানা যায়,২০১২ সালের ১৫ আগস্ট বাদ আছর,সুনামগঞ্জ সরকারী এসসি বালিকা বিদ্যালয়ে সাংবাদিক নামধারী পংকজ দে ও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক কল্লোল রায় চপল এর নির্দেশে তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফজলে রাব্বি স্মরণ ও রাসেলের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ একটি আওয়ামী-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী অতর্কিত পরিকল্পিত হামলা করে শিক্ষক আবুল আ’লা মোঃ মওদুদকে বেদম মারপিটক্রমে গুরুতর আহত করে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই হাবিবের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টহল দল আধমরা অবস্থায় ঐ শিক্ষককে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় পুলিশ দল তাকে জানায়,“আমরা আপনাকে উদ্ধার না করলে হামলাকারীরা নিশ্চিত অপহরন ও গুম করে ফেলতো আপনাকে”। পরে পংকজের সাঙ্গপাঙ্গদের সাক্ষী সাজিয়ে ফজলে রাব্বী স্মরনকে বাদী করে রাষ্ট্রদ্রোহী আইনের ১২৪ (ক) ধারায় সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় ননজিআর ১৩২/২০১২ (সদর) দায়ের করে পুলিশ। প্রথমে হামলার কবল থেকে উদ্ধার করা শিক্ষককে জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্বান্ত নিলেও হামলার গডফাদার পংকজ দে,সদর মডেল থানায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের নিয়ে থানার ওসিকে বাধ্য করে মামলা দায়ের করে নিরীহ ঐ শিক্ষককে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে ভিডিও করত: তাঁর ছবি উত্তোলন করে এটিএন নিউজ ও সমকাল পত্রিকায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশন করে। বিষয়টি জেনে তৎকালীন আমার দেশ পত্রিকায় শিক্ষকের উপর হামলা ও মামলার ঘটনাটিকে অমানবিক বলে সত্য সংবাদ প্রকাশ করা হয়। শিক্ষক আবুল আ’লা মোঃ মওদুদ বলেন,হামলার আগে একাধিকবার বিদ্যালয়ে অফিস কক্ষে অনধিকার প্রবেশ করে প্রকাশ্য দিবালোকে পংকজ কান্তি দে ও তার সহযোগীরা আমাকে খুন করার হুমকি দেয়। এছাড়া পংকজ দের নির্দেশে ফজলে রাব্বী স্মরণ সরাসরি আমার মোবাইল ফোনে কল করে আমাকে হুমকি দিতে থাকে। তৎকালীন এডিসি (শিক্ষা) পরির্মল সিংহ এর উপস্থিতিতে পংকজ ও স্মরণের প্রেরিত গুন্ডাবাহিনীর কবল থেকে তিনি রক্ষা পান। পরবর্তীতে একাধিকবার হুমকীর কবলে পড়ে নিরীহ ঐ শিক্ষক তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইয়ামিন চৌধুরী ও পৌরসভার মেয়র আয়ূব বখত জগলুলকে বিষয়টি অবহিত করার পরও তিনি আত্মরক্ষা করতে পারেননি। ভারত বিরোধী কথাবার্তা বলার অভিযোগে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা “র” এর এজেন্ট হিসেবে সাংবাদিক পংকজ কান্তি দে আমাকে খুন করতে চেয়েছিল। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট মাসুক আলম। আসামীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সুনামগঞ্জের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট শহীদুজ্জামান চৌধুরী,এডভোকেট নিরঞ্জন দাস,এডভোকেট সাজ্জাদুর রহমান ও এডভোকেট শহীদুল হক।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে পংকজ দে এর বিরুদ্ধে ইসলামী ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখা কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। মজলুম শিক্ষক মওদুদ বলেন,পংকজ কান্তি দে,ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা “র” এর এজেন্ট হিসেবে গত ফ্যাসিস্ট আমলে দায়িত্ব পালন করেছে। ভারতীয় হাইকমিশনারকে নিজ বাসাবাড়ী ও অফিসে এনে বিভিন্ন সভা সমিতি সেমিনারে বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে সুনামগঞ্জের আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও ক্ষমতার দাপটকে কুক্ষিগত করে সে। বর্তমান জেলা প্রশাসক ড.মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া যখন সর্বপ্রথম সুনামগঞ্জে যোগদান করেন (বর্তমান কর্মস্থলে যোগদানের তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪) তখন সাংবাদিকদের সাথে আনুষ্ঠানিক মত বিনিময় সভায় বাংলাদেশ প্রতিদিন ও বাংলাভিশন প্রতিনিধি মাসুম হেলাল,সুস্পষ্ট অভিযোগে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিত্বকারী একজন সাংবাদিক কর্তৃক শহরের শহীদ জগৎজ্যোতি গ্রন্থাকারে বসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে প্রতিহত করতে কি কি গোপনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছিল এবং কথিত সাংবাদিকের কোন কোন দোসররা সেখানে প্রতিনিধিত্ব করেছিল তা জেলা প্রশাসককে অবগত করেন। মাসুম হেলালের প্রস্তাবিত ঐ গোপনীয় সভার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবী জানালেও এই বিষয়টি এখনও আলোর মুখ দেখেনি। বরং বিতর্কিত পংকজ দেকে প্রাধান্য দিয়ে জেলা প্রশাসন একদল পোষ্য সাংবাদিককে জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ জেলা প্রশাসনের সকল ক্ষেত্রে সুযোগ দিয়ে বৈষম্যের সৃষ্টি করেছে। জানা গেছে,পংকজ কান্তি দে দৈনিক সমকাল পত্রিকায় সৈয়দপুর মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হাফেজ ড. সৈয়দ রেজওয়ান আহমদ কে জঙ্গী তকমা দিয়ে বিতর্কিত সংবাদ পরিবেশন করলে বিষয়টি নিয়ে দেশ জুড়ে তোলপাড় শুরু হলে তৎকালীন এনএসআই,ডিজিএফআই ও পুলিশের বিভিন্ন গোয়েন্দা ইউনিট তদন্তে নেমে জঙ্গী সম্পৃক্ততার কোন প্রমাণ পায়নি। পংকজ কান্তি দের বিরুদ্ধে প্রিন্সিপালের দায়েরকৃত ১০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণসহ মানহানীর ঘটনায় বিজ্ঞ দেওয়ানী আদালতে টাকা ১/২০০৮ নং মামলা এখনও বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়াও সুনামগঞ্জ জেলা হেফাজতে ইসলামের অন্যতম নেতা হয়রত মাওলানা এমদাদুল হককে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছিলেন পংকজ ও তার সহকর্মী গণ-জাগরন মঞ্চের নেতাকর্মীরা। এসময় গ্রেফতার আতংকে শহরের সবকটি মসজিদের ইমাম মুয়াযযিনরা শহর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। পংকজের বিরুদ্ধে শাল্লা থানা পুলিশ প্রশাসনের একজন কন্সষ্টেবলের কেলেংকারী সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশের মাধ্যমে নির্যাতিতা নারীর নাম পরিচয় প্রকাশ করে আইন লঙ্গনের দায়ে সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ২৫৭/২০১৩নং মামলা দায়ের হয়। ১৬/০১/২০১২ইং রোজ সোমবার পংকজ কান্তি দে পরিচালিত আইডিয়াল লাইব্রেরীকে নগদ অর্থদন্ড প্রদান করে মোবাইল কোর্ট। যা ১৭/০১/২০১২ইং দৈনিক সমকাল পত্রিকায় “সুনামগঞ